Skip to main content

গণেশবাবুর স্মার্টফোন



কালে চায়ের সাথে বিস্কুটের মত খবরের কাগজ না হলে আমার একদমই চলে না। সবে প্রথম পাতায় চোখ বোলাচ্ছি হঠাৎ কাগজের ওপর একটা ছায়া পড়ল। মুখ তুলে দেখি গণেশবাবু। মুখে লাজুক হাসি। হাতে একটা কাগজে মোড়া ছোট বাক্স। চাইনিজ স্পেস স্টেশন নিয়ে আমার লেখা ‘তিয়াংগং’ এর গল্প যারা পড়েছেন তারা গণেশবাবুকে ভালো করেই চেনেন। যারা চেনেন না, তাদের বলে দিই, ইনি আমার প্রতিবেশী। বয়স এখনো ষাটের নীচে। একমাত্র ছেলে থাকে ইউএসএ তে।

OldMan

-আরে, আসুন আসুন!

আমার বিরক্তি গণেশবাবুকে বুঝতে দিলাম না।

-বসুন, কী ব্যাপার, হাতে ওটা কী?
-আর বলবেন না মশাই, ছেলে আমাকে গাড্ডায় ফেলে দিয়েছে। নাহলে কি সকাল সকাল আপনাকে বিরক্ত করতে আসি?

এই মরেছে! গণেশবাবু কি আমার অভিনয় ধরে ফেলেছেন? তাই ডবল জোর দিয়ে বললাম, ‘আরে আরে, মানুষ তো মানুষের কাছেই আসবে। এত ভাবছেন কেন? তা, কী বিপদে ফেলল আপনার ছেলে? মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছে না কি? বলা যায় না, আমেরিকা বলে কথা।‘

-না না, তা নয়। আপনাদের আশীর্বাদে ছেলের এখনো কোন বেচাল দেখিনি।
-তবে?
-ছেলে আমার জন্য এইটা পাঠিয়েছে।

হাতের বাক্সটা এবার আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন গণেশবাবু। হাতে নিয়ে কাগজ সরাতেই বোঝা গেল জিনিষটা একটা স্মার্টফোনের বাক্স।
-খুলে দেখুন। গণেশবাবু উৎসাহ নিয়ে বললেন।

বাক্স খুলতেই বেরিয়ে এল সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি ডিসপ্লে সমেত ঝাঁ চকচকে নতুন একটা এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন।
-বাঃ, ছেলে তো ভালো জিনিষই পাঠিয়েছে আপনার জন্যে। এটা গাড্ডায় ফেলা হল? প্রবলেম কোথায়?
-আরে মশাই, আমি কি কোনদিন ওরকম দামী ফোন হাতে নিয়েছি? কী করে কী করতে হয় এর কিছুই জানি না আমি।
-জানেন না তো শিখে নিন। এতে ঘাবড়ে যাবার কী আছে?
-সেই জন্যেই তো আপনার কাছে আসা। আপনি সায়েন্সের লোক। আমাকে একটু শিখিয়ে পড়িয়ে দিন না।

গণেশবাবুর ঝুলি থেকে বেড়াল বেরোল এতক্ষণে। লম্বা লোক দেখলে যেমন সবাই বলে এটা নামিয়ে দাও, ওটা পেড়ে দাও - এও দেখছি তেমনি। বিজ্ঞানের সম্মান রক্ষার গুরুদায়িত্ব এখন আমার কাঁধে।
-দেখুন, আমি নিজে ও খুব একটা কিছু জানি না। তবে সাধারণ কাজগুলো কীভাবে করতে হয় তা বলতে পারব।
-আপনি যা জানেন তা আমার জন্যে যথেষ্ট-র থেকে ও বেশি।

সকালবেলা খবরের কাগজ পড়তে না পারার দুঃখ চেপে রেখে অধ্যাপনায় লেগে পড়লাম। আধঘণ্টার চেষ্টায় স্মার্টফোনের বেসিক অপারেশনস গণেশবাবুর মোটামুটি রপ্ত হয়ে এল।
-পারব মনে হচ্ছে।

গণেশবাবুর গলায় প্রত্যয়ের সুর। একমনে ফোন নিয়ে টেপাটেপি করেই যাচ্ছেন।

-আরো কিছু কথা আছে।
-হ্যাঁ, বলুন।
ফোন থেকে চোখ না সরিয়েই অন্যমনস্ক ভাবে বললেন গণেশবাবু।

-ডালকে সেদ্ধ করে নিলেই ডাল রান্না সম্পূর্ণ হয় না। কালোজিরে, মেথি, মৌরী, তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা এসব না পড়লে কি ডালের টেস্ট আসে?

এবার গণেশবাবু অবাক চোখে তাকালেন।
-ফোনের মাঝখানে ডাল আসছে কেন, মশাই!
-ঠিক তেমনি ‘অ্যাপস’ না থাকলে স্মার্টফোনটা ও অতটা আর স্মার্ট থাকে না।
-মানে?

গণেশবাবুর মুখ দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছিল ব্যাপারটা তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না।
-অ্যাপস হচ্ছে ফোনের জন্য তৈরী অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার। ভালো ভালো অ্যাপস যদি আপনার ফোনে না থাকে তো ফোন ব্যবহার করে কোন মজাই পাবেন না।
-এগুলো নতুন ফোনের মধ্যে দিয়ে দেয় নি?
-না। কিছু কিছু হয়ত আছে, কিন্তু সব দেয় নি।
-ফোন করা আর ফোন রিসিভ করা- ব্যস। এ দুটো হলেই আমার আর কিছু চাই না। বাকী সব ছেড়ে দিন তো মশাই! অত ঝামেলায় আমার দরকার নেই।
গণেশবাবু কোর্টের জজের মত রায় শোনালেন।
-তাহলে এটা কাউকে দান করে দিন।

গণেশ বাবুর চোখদুটো বড় হয়ে গেল।
-দান করতে যাব কী দুঃখে? ছেলে বাবার জন্যে কত দূর থেকে পাঠিয়েছে। তাছাড়া, ফোনটা বড়। দেখতে ও কত সুন্দর। খামোখা দান করতে যাব কেন?
-আপনাকে যদি কেউ একটা ছোট্ট এরোপ্লেন দেয়, আপনি কি সেটাকে গাড়ীর মত রাস্তা দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাবেন?
-কী বলছেন এসব? প্লেন তো আকাশে উড়বে। রাস্তা দিয়ে কেউ প্লেন চালায়?
-আপনি তো তাই করছেন। আপনার ছেলে আপনাকে প্লেন দিয়েছে আর আপনি সেটাকে রাস্তায় চালানোর প্ল্যান করছেন।

মুখ দেখে বোঝা যাছিল গণেশবাবু একেবারে ক্লিন বোল্ড। আমার কেমন যেন একটু মায়া হল। কথাগুলো আরো নরম সুরে বললে বোধহয় ভালো হত।
-শুনুন, দিনকাল পাল্টে গেছে। ফোনে হ্যালো হ্যালো করে কথা বলার জমানা এখন আর নেই। ভয়েস কল দিন দিন কমে আসছে। এসএমএস ও আজকাল কেউ আর করে না।

গণেশবাবুর চোখে বিস্ময়।
-তাহলে ফোন দিয়ে লোকে করে টা কী?
-সব কাজই এখন ফোনের সাহায্যে করা যায়।
-কী কাজ?
-কী নয়? আজকাল খুব কম কাজই আছে যা মোবাইল ফোন দিয়ে করা যায় না।
-তবু?
-এই যেমন ধরুন, টেলিফোন বা ইলেকট্রিকের বিল জমা করা, রান্নার গ্যাস বুক করা, মোবাইল রিচার্জ করা, কাউকে টাকা পাঠানো, অনলাইন কেনাকাটা অথবা ছেলেমেয়ে, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের সাথে হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ফেসবুক মারফত সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখা- এর শেষ নেই।
-বেশ লাগছে। আরেকটু বলুন না।

Fone

-পৃথিবীর কোনায় কানায় ছড়িয়ে থাকা আপনার কলেজের পুরনো বন্ধুদের ও হয়ত খুঁজে পাবেন এই ফোনের মধ্যেই। কলেজে পড়ার সময় যাকে দেখলে আপনার হার্টবিট বেড়ে যেত, যে আপনার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে - বলা যায় না, হয়ত ভার্চুয়াল দুনিয়াতে তার সাথে ও একদিন দেখা হয়ে যেতে পারে। যারা পড়তে ভালোবাসেন তাদের জন্যে রয়েছে কিন্ডল (kindle) অ্যাপ। সময়মত ওষুধ খেতে রোজ মনে করিয়ে দেবে মেডিসেফ (medisafe) অ্যাপটি। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পথ দেখাবে জি-ম্যাপস নামের অ্যাপ। বাসে ট্রেনে কিংবা প্লেনে সফর করতে গিয়ে আমাদের যে সময়টুকু নষ্ট হয় তাও কাজে লাগাতে সাহায্য করবে আপনার ফোন। আপনি তো গান শুনতে ভালোবাসেন। ইউটিউব থেকে ঠিক পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের গানগুলো। ফোনের ক্যামেরায় সেলফি তুলে পোস্ট করাটা ও একটা মজা। আজকাল সবাই করে। আপনি যত হাসবেন, দেখবেন নিজের জীবনটা আরো সুন্দর লাগছে।
-বলেন কী মশাই! তাই নাকি? আমি ও বলি, ছেলেমেয়েরা সর্বক্ষণ মোবাইলে মাথা গুঁজে পড়ে থাকে কেন! আজ বুঝলাম।

গণেশবাবু বিজ্ঞের মত মাথা নাড়লেন।

-স্মার্টফোনের জন্য সবার আগে দরকার ইন্টারনেট। সেটা আপনার সিম থেকেই পাবেন। আর কিছু অ্যাপস ডাউনলোড করতে হবে।
-কোনটা নেব, কোথায় পাব, আমি তো কিছুই জানি না।

গণেশবাবু যেন অথৈ জলে পড়েছেন।
-ঘাবড়াবার কিছু নেই। সব বলছি। সমস্ত অ্যাপস আপনি পাবেন গুগল প্লে স্টোরে।
-দোকানের ঠিকানাটা বলবেন! আমি লিখে নিচ্ছি।
-গুগল প্লে স্টোর আপনার ফোনেই রয়েছে। অন্য জায়গা থেকে ডাউনলোড করতে যাবেন না যেন। এবারে কোনটা আপনি নেবেন তা নির্ভর করছে আপনার পছন্দ আপনার রুচির ওপর। যে গান শুনতে ভালোবাসে সে গানের অ্যাপস ই চাইবে। চারপাশে কী ঘটছে সেসব খবর রাখা যার পছন্দের লিস্টে একনম্বর, সে নেবে নিউজ অ্যাপস।

গণেশবাবু মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনছিলেন।
-আপনার তো ব্যাঙ্কে একাউণ্ট আছে। আজকাল সব ব্যাংকেরই ই-পাসবুক অ্যাপ আছে। একবার নামিয়ে নিলে পাসবুক আপডেট করার জন্যে আর ব্যাঙ্কে যেতে হবে না। আপনার ফোনের ভেতরেই নিজের পাসবুক দেখতে পাবেন। তাছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ এর সাহায্যে আপনি ঘরে বসেই লেনদেন করতে পারবেন।
-তাই? এ তো বেশ ভালো কথা। ব্যাঙ্কে যা লম্বা লাইন। তার ওপর মাঝে মাঝেই মেশিন নষ্ট থাকে। নয়ত লিঙ্ক থাকে না।
-তবে এর সাথে কিছু সাবধানতার কথা বলে দেওয়া আমার কর্তব্য।
-এতে ভয়ের কিছু নেই তো?
-নেই। আবার আছে ও।

আমার এই এক মস্ত দোষ। মিথ্যে কথা কেন জানি না, আসে না।
-এ আবার কিরকম কথা?
-নিজে সাবধান থাকলে ভয় নেই, অসাবধান হলে আছে। অনেকটা রাস্তা পার করার মত ব্যাপার আর কি।
-ঠিক কীভাবে সাবধান থাকতে বলছেন?
-অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় সাবধান থাকুন। পাবলিশার এর নাম দেখে নিন। নতুন, অচেনা ও অনামী পাবলিশার থেকে অ্যাপ না নেওয়াই ভালো।
কাস্টমার রিভিউ পড়লে আপনি আইডিয়া পেয়ে যাবেন যে সেই অ্যাপটি ডাউনলোড করাটা ঠিক হবে কিনা বা সেটা আপনার কাজে লাগবে কিনা। আরো একটা ব্যাপার। অ্যাপ কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিঃশব্দে নিজের কাজ করতেই থাকে। আপনার যে কোন দামী তথ্য সে গোপনে হ্যাকারদের কাছে পাচার করে দিতে পারে।
-এর উপায়?
-যেকোনো অ্যাপ ইনস্টল করতে দিলেই দেখবেন অনেককিছুর পারমিশন চায়। আমরা এসব না পড়েই ‘ওকে’ করে দেই। এ কাজটি ভুলেও করবেন না। ‘ওকে’ করার আগে একবার পড়ে দেখুন এটি কী কী পারমিশন চাইছে। ধরুন, মেসেঞ্জার জাতীয় অ্যাপ আপনার কল লগ, কন্টাক্ট লিস্ট, মিডিয়া ফাইলস ইত্যাদির জন্য প্রবেশাধিকার চাইতেই পারে, কিন্তু কোনো গেম অ্যাপ যদি এসব চায়? বুঝতে হবে গণ্ডগোল আছে। সরাসরি ‘নো’ করে বের হয়ে আসা উচিত।
-যদি ভুলে ইনস্টল করে ফেলি, তখন?
-তার ও উপায় আছে। প্রাইভেসি সেটিংসে গিয়ে একটা একটা করে অ্যাপ ধরে কতটা পারমিশন দেয়া আছে দেখুন। যেসব অ্যাপের যে পারমিশন দরকার নেই সেসব থেকে টিক চিহ্নটি মুছে দিন।
-আর কিছু?
-ফোনের স্ক্রীন সবসময় লক করে রাখুন। নেট ব্যাঙ্কিং মোবাইল ব্যাঙ্কিং কিংবা ই-ওয়ালেট অ্যাপসগুলোকে মজবুত পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত রাখুন। কাজ শেষ হয়ে গেলে আর্থিক অনলাইন অ্যাপস থেকে লগ আউট করতে ভুলবেন না। পিন, পাসওয়ার্ড, ওটিপি এসব কাউকে বলবেন না। কোন ফোন এলে ও না।
-আমার কেমন যেন ভয় করছে। কত কিছু কানে আসে।
-পথে রোজ কত অ্যাক্সিডেণ্ট হয়। তা বলে কি আপনি রাস্তায় বেরোনো ছেড়ে দিয়েছেন? ট্রাফিক রুলের মত এখানে ও নিয়মগুলো মানতে হবে। ব্যস। ছেলের দেওয়া নতুন ফোনটা ভালো করে ব্যবহার করুন। দেখবেন দুনিয়া আপনার হাতের মুঠোয়। বিপদের আশঙ্কা বেশী কমবয়সীদের ক্ষেত্রে। তারা ভালো খারাপ অতটা বোঝে না। আপনার তো সে ভয় নেই। কীভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন সে নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আপনি গুগল –এ সার্চ করে নিজেই খুঁজে নিতে পারেন। চিন্তা নেই, স্মার্টফোন আপনাকে স্মার্ট বানিয়ে তবে ছাড়বে।
-এই বয়সে এসে অতকিছু কি পারব?
-দেহের বয়স বাড়বেই। মনের বয়স বাড়তে না দিলেই হল। যিনি আর নতুন কিছু শিখছেন না, তিনিই বৃদ্ধ। বলতে গেলে বুড়ো না হবার জাদুকাঠি আপনার হাতেই। সবসময় শিখতে থাকুন, জানতে থাকুন। আজকাল দুধের শিশু ও মোবাইল ফোন নিয়ে খেলছে। তারা পারলে আপনি কেন পারবেন না? আপনি কম কিসে? নিজের ছেলেকে হাতে ধরে কত কিছু শিখিয়েছেন। জীবনে অনেক কিছু দেখেছেন, শিখেছেন ও। এটা ও পারবেন। একবার পারব ভাবলেই দেখবেন পেরে গেছেন। নতুন ফোনে একটা সেলফি তুলে ছেলেকে পাঠান, দেখবেন সে কত খুশী হবে!
-ঠিক আছে। আজ চলি। খুব ভালো লাগল। থ্যাঙ্ক ইউ।

গণেশবাবু উঠে দাঁড়ালেন। চোখদুটো উদ্দীপনায় চকচক করছে। আমি ও দাঁড়িয়ে পড়লাম। স্কুলের সময় হয়ে এসেছে। আজ আর দাড়ি কামানো হবে না। আধ ঘণ্টা পর আমি স্কুলের পথে পা বাড়ালাম। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, হাত দিলেই খরখর করছে। সকালের পেপারটা আজ আর পড়াই হল না। কিন্তু, খারাপ লাগার বদলে এক অদ্ভূত ভালোলাগায় মনটা ভরে উঠছিল। কেন, কে জানে!

(লেখাটা যদি আপনার ভালো লেগেছে তবে অন্ততঃ একজন বয়স্ক লোককে পড়ান। দরকার হলে প্রিন্ট করে নিন। ইণ্টারনেটের দুনিয়ার রস থেকে তাঁরা অনেকেই বঞ্চিত হয়ে আছেন। আপনার একটা ছোট্ট কাজ হয়ত কারো দুনিয়া বদলে দিতে পারে। দেখুন না, চেষ্টা করে।)

– ত্রিদেব চৌধুরী

নতুন লেখার খবর পেতে চাইলে আমার ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
tridev
View Author Profile

Comments

Popular posts from this blog

আমি করোনা বলছি

(You may use Landscape mode for a better view, if you are reading this on your phone.) হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। আমি করোনা ভাইরাস বলছি। করোনা পরিবারের সপ্তম সদস্য। আপনারা আমাদের নাম রেখেছেন নভেল করোনা ভাইরাস (2019-nCoV) - অর্থাৎ নব্য করোনা ভাইরাস। খুব মিষ্টি নাম কিন্তু। ২০১৯ এর শেষের দিকে চীনের উহান প্রদেশে আমাদের জন্ম। ঘটনাটা খুলেই বলি। চীনেরা প্যাঙ্গোলিন মেরে মেরে শেষ করে দিচ্ছিল। প্যাঙ্গোলিনেরা তখন আমাদের রিকোয়েস্ট করল কিছু একটা করার জন্যে। আমাদের গুরুজনেরা বাদুড়ের শরীরে আগে থেকেই মজুত ছিলেন। সেখান থেকে টুক করে তাঁরা প্যাঙ্গোলিনের শরীরে ঢুকে পড়লেন। প্যাঙ্গোলিনের দেহে ঢোকার পর তাঁদের রূপ পরিবর্তন হয়ে আমাদের জন্ম হল। সেখান থেকে আমরা মানুষের দেহে ঢুকে পড়লাম। আক্রমণ শুরু হল। অবাক হচ্ছেন? আমরা মানে ভাইরাসেরা অনেক রকম কায়দা জানি। আপনারা অত কিছু ভাবতেই পারবেন না। আপনাদের চোখে আমরা বেশ রহস্যময়। আমরা জীব নাকি জড় - এ ব্যাপারে আপনাদের বিজ্ঞানীরা এখনো ঠিক যাকে বলে পুরোপুরি ‘সিওর’ হতে পারেন নি। কারণ, আমরা ঠিক সেল বা জীবকোষ নই। নিছক জেনেটিক মালমশলা (নিউক্লিক এসিড) - প্রোটি

অচিন পাখী

ক্লা স নাইনে আমার এক স্যার বলেছিলেন, ‘চাইলে তুমি ফিউচারে যেতে পারবে।‘ মনটা আনন্দে নেচে উঠেছিল। টাইম মেশিনের গল্প আগেই পড়া ছিল। সেটা তাহলে এবার সত্যি হতে চলেছে? জানতে চেয়েছিলাম, কীভাবে? জবাবে স্যার যা শুরু করলেন, তাতে আমার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। বাপ রে বাপ। বেজায় কঠিন। আগে জানলে একটু ও উৎসাহ দেখাতাম না। আমার মনমরা ভাব দেখে স্যার বললেন, ‘অঙ্কে যাদের আতঙ্ক তাদের জন্য এসব বোঝা মুশকিল।‘ ‘ভালো ভালো জিনিষ তো জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তাই বলে অঙ্ক? আমি ওতে নেই।‘ জোরে বলার সাহস নেই। তাই মনে মনেই বললাম। পরে যদি ও বিজ্ঞান শেখার দায়ে অঙ্ক আমাকে শিখতে হয়েছিল। সেসব তো স্টুডেণ্ট লাইফের কথা। এখন ভাবি, আমার মত আরো অনেকেই নিশ্চয় আছেন যারা বিজ্ঞানের নতুন নতুন ব্যাপার জানতে আগ্রহী। কিন্তু ঘুরেফিরে সমস্যা ওই এক জায়গায়। ড্রাগনের মত ভয়ঙ্কর আগুনে অঙ্ক! সেই দুঃখের জায়গা থেকেই নিজেকে একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছি। বিনা অঙ্কে বিজ্ঞানের কথা বলব। যাতে ক্লাস নাইনের ছাত্র ও বুঝতে পারে। টাইম মেশিনে চড়ে যদি অতীত বা ভবিষ্যতে যেতে হয় তবে প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসবে তা হল অতীত, ভবিষ্যত, বর্তমান কা

বড্ড কাঁটা, আস্তে গিলিস!

স ন্ধে থেকেই বৃষ্টি পড়ছিল। গিন্নী যুত করে বানিয়েছিলেন আমার অত্যন্ত প্রিয় পদ সরষে ইলিশ। খুব মজা করে খাচ্ছিলাম। গিন্নী বলছিলেন বটে রাতের বেলায় সরষে বেশি খেও না, পেট গরম হবে, বয়স তো কম হয় নি ইত্যাদি। সরষে ইলিশের সাথে এরকম ঘ্যানর ঘ্যানর করলে মানায় কখনো, বলুন! আমি সেদিকে কান না দিয়ে গপাগপ খেয়েই যাচ্ছিলাম। মাঝখানে গলায় একবার কাঁটা ও আটকে গেছিল। যাই হোক, খেয়েদেয়ে তারপর ঠিক এগারোটায় শুয়ে পড়েছি। মাঝরাতে হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল। ঘুমচোখে দরজা খুলে দেখি, একি! আমার তিনতলার ফ্ল্যাটের দরজায় দাঁড়িয়ে স্বয়ং কিশোর কুমার !!! পরনে একটা ঢিলে জোব্বা মত পোষাক। এরকম একটা অদ্ভুত সাজে আগে তাঁকে কখনো দেখি নি। কিশোর কুমার তো একটু ইয়ে - মানে মাথায় একটু ছিট তো আগে থেকেই ছিল। নিজের বাড়ীতে না কি সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন, ‘কিশোর কুমার হইতে সাবধান!’ সবই মুডের ব্যাপার। আজকের পোষাকটা ও সেই মুডেরই বহিঃপ্রকাশ হবে হয়তো। সাথে কে একজন লম্বা, দাড়ি অলা, বুড়ো মত লোক। কোথায় যেন দেখেছি লোকটাকে। লোকটা পরে আছে কোট প্যাণ্ট, আর হ্যাট। অনেকটা যেন কিশোর কুমার স্টাইল। যাই হোক, মাঝরাতে কিশোরদা কে দেখে আম