Skip to main content

আমি করোনা বলছি



(You may use Landscape mode for a better view, if you are reading this on your phone.)

AmiCoronaBolchi
হ্যাঁ

ঠিকই শুনেছেন। আমি করোনা ভাইরাস বলছি। করোনা পরিবারের সপ্তম সদস্য। আপনারা আমাদের নাম রেখেছেন নভেল করোনা ভাইরাস (2019-nCoV) - অর্থাৎ নব্য করোনা ভাইরাস। খুব মিষ্টি নাম কিন্তু। ২০১৯ এর শেষের দিকে চীনের উহান প্রদেশে আমাদের জন্ম।

ঘটনাটা খুলেই বলি। চীনেরা প্যাঙ্গোলিন মেরে মেরে শেষ করে দিচ্ছিল। প্যাঙ্গোলিনেরা তখন আমাদের রিকোয়েস্ট করল কিছু একটা করার জন্যে। আমাদের গুরুজনেরা বাদুড়ের শরীরে আগে থেকেই মজুত ছিলেন। সেখান থেকে টুক করে তাঁরা প্যাঙ্গোলিনের শরীরে ঢুকে পড়লেন। প্যাঙ্গোলিনের দেহে ঢোকার পর তাঁদের রূপ পরিবর্তন হয়ে আমাদের জন্ম হল। সেখান থেকে আমরা মানুষের দেহে ঢুকে পড়লাম। আক্রমণ শুরু হল।

অবাক হচ্ছেন? আমরা মানে ভাইরাসেরা অনেক রকম কায়দা জানি। আপনারা অত কিছু ভাবতেই পারবেন না। আপনাদের চোখে আমরা বেশ রহস্যময়। আমরা জীব নাকি জড় - এ ব্যাপারে আপনাদের বিজ্ঞানীরা এখনো ঠিক যাকে বলে পুরোপুরি ‘সিওর’ হতে পারেন নি। কারণ, আমরা ঠিক সেল বা জীবকোষ নই। নিছক জেনেটিক মালমশলা (নিউক্লিক এসিড) - প্রোটিন দিয়ে যেন গিফট প্যাক করা। খালি চোখে তো প্রশ্নই ওঠে না, সাধারণ মাইক্রোস্কোপ দিয়ে ও আমাদের দেখা সম্ভব নয়। কারণ,আমরা ব্যাকটেরিয়া থেকে ও কয়েকশো গুণ ছোট। প্রাণীকোষের ভেতরে একবার ঢুকতে পারলে তারপর সেই কোষের ভেতরকার যন্ত্রপাতিকে হাইজ্যাক করে আমরা নিজের কাজ করাতে থাকি। হাইজ্যাকার যেভাবে পাইলটের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে যেদিকে ইচ্ছে প্লেন নিয়ে যায়, অনেকটা সেরকমই। আমাদের লক্ষ্য হল জীবকোষের সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে নিজের সংখ্যা বাড়ানো। তারপর এক সময় আক্রান্ত কোষকে ফাটিয়ে দিয়ে সদলবলে আশেপাশের কোষগুলোতে ছড়িয়ে পড়া; এবং আক্রমণ ক্রমেই জোরদার করে তোলা।

মানবজাতির দুশমনদের তালিকায় আমাদের স্থান দ্বিতীয়। ভাবছেন, এক নম্বর শত্রুটি তবে কে? আরে বাবা, প্রথম স্থানটি তো আপনাদেরকেই ছেড়ে দিতে হবে। যেভাবে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছেন আপনারা। দিন আসছে, এই গ্রহের দখল আমরাই নেব।

AngryVirus1

আপনাদের শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন, ভাইরাসের যা মুখ্য উপাদান, সেই নিউক্লিক এসিড যেহেতু মূলতঃ দু’ধরণের হয় (ডিএনএ এবং আরএনএ); ভাইরাস ও তাই দুই প্রকারের – ‘ডিএনএ ভাইরাস’ ও ‘আরএনএ ভাইরাস’। জীবকোষের ভেতরে ঢোকার পর ডিএনএ ভাইরাস নিজের জেনেটিক কোড কে ‘আরএনএ মেসেজ’ এ অনুবাদ করিয়ে নেয় এবং সেইমত ভাইরাল প্রোটিন তৈরী হতে থাকে। তুলনায় ‘আরএনএ ভাইরাস’ যেন একটু বেশি স্মার্ট। কারণ সে প্রথমেই একধাপ এগিয়ে আছে। জেনেটিক কোড অনুবাদ করার ঝামেলা তার নেই। সেল বা কোষ কে অতিরিক্ত ব্যতিব্যস্ত না করে ও সে নিজের কাজ ঠিক হাসিল করে নিতে পারে। মানবদেহে কোষ যখন বিভাজিত হয় তখন ডিএনএ ঠিকঠাক কপি হল কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্যে এক ধরণের প্রুফ-রিডিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। আরএনএ ভাইরাস অতসবের ধার ধারে না। একটি কোষের ভেতরে ঢোকার পর ভাইরাসের ডিএনএ বা আরএনএ হয়ত কয়েক হাজার বার কপি হয়। সুতরাং প্রতিটি সংক্রমণেই ভাইরাস একটু একটু করে বদলে যেতে থাকে। বিজ্ঞানীরা একেই বলেন মিউটেশন। মিউট্যান্ট ভাইরাস আরো মারাত্মক। কারণ সে তখন দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরো বেশি করে ফাঁকি দিতে পারে, নতুন নতুন কায়দায় ছড়াতে পারে, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধকে কাঁচকলা দেখাতে পারে। কানে কানে বলি, আমরা কিন্তু জাতে ‘আরএনএ ভাইরাস’। বুঝতেই পারছেন, নেহাত হাবাগোবা নই। স্মার্টগোছের। মানছি, আপনাদের হিসেবে আমাদেরকে ঠিক জীব বলা যাচ্ছে না। কিন্তু অত প্যাঁচ পয়জার যে জানে তাকে কি চোখ বুজে ‘জড় পদার্থ’ ভাবা যেতে পারে? আমাদের জীবন বলতে গেলে ধার করা জীবন - আপনাদের হিন্দি মুভির ভাষায় যাকে বলা যেতে পারে ‘উধার কি জিন্দগি।‘ তবু আমরা টিঁকে আছি, আপনারা ও আছেন। আপনাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা আর আমাদের মধ্যে নিরন্তর যুদ্ধ চলছে সেই প্রাচীন কাল থেকেই।

AngryVirus2

যাই হোক, ভাইরাস তত্ত্ব নিয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাই না। সেসব আপনারা মাথা খাটিয়ে বের করুন। আমাদের বিষয়ে আপনারা যত অজ্ঞ থাকবেন ততই আমাদের সুবিধে। প্রথমদিকটায় আপনাদের মনে হচ্ছিল চায়নার বাইরে কোন দেশেই করোনা ভাইরাস নিয়ে প্যানিক করার কোন মানেই হয় না। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি আমরা বদলে দিয়েছি। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আমাদের বীর সেনানীরা ছড়িয়ে পড়েছেন। সারা বিশ্বে প্রায় চার লক্ষ লোককে আমরা অ্যাটাক করেছি এবং সতেরো হাজারের ও বেশি লোককে খতম করে দিয়েছি। চায়না থেকে শুরু করে প্রথমে ইউরোপে ঢুকেছি। ইতালির লোকেরা বেশ নাকউঁচু ভাব দেখায়। আমাদের অবহেলা করেছিল। ওদের নাকে ঝামা ঘষে দিয়েছি। আটলান্টিক সাগর পেরিয়ে আমেরিকা ও পৌঁছে গেছি। আবার সাউথ এশিয়ার দেশ যেমন সিঙ্গাপুর, জাপানে ও আমরা আছি। এবার আমাদের লক্ষ্য জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ – ভারতবর্ষ।

তবে আমাদের এখনো কিছু প্রবলেম আছে যা নিয়ে আমরা চিন্তিত। প্রথম কথা হল, আমরা অতটা ঘাতক নই। আমাদের বড় ভাই সার্স –এ আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার যেখানে প্রায় দশ পারসেন্ট সেখানে আমাদের আক্রমণে এযাবৎ মৃত্যুর হার মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ। সব মিলিয়ে মৃত্যুর হার অন্য ভাইরাসের তুলনায় সত্যিই কম। তবে বয়স্কদের অ্যাটাক করাটা আমাদের জন্যে সোজা। চীনদেশে যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের আশি শতাংশেরই বয়স ষাটের ওপর। ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন, যে কোন সংক্রমণেই বিপদের বেশি আশঙ্কা থাকে প্রবীণদের। বয়সের সাথে সাথে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি ও কিছুটা কমে আসে। এক কথায় সামলানোর ক্ষমতাটা কম। এছাড়া ও যাঁদের ডায়াবেটিস বা হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা রয়েছে তাঁদের ও আমরা সহজেই কাবু করতে পারি। ইতালিতে যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের গড় বয়স আশি। তবে রোগ ছড়ানোর স্পিড আমাদের অনেক বেশি।

আমাদের আরো কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা যে একদম নতুন ধরণের করোনা ভাইরাস (2019-nCoV) তা আপনারা খুব দ্রুত জেনে ফেলেছেন। ধরা পড়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই বিজ্ঞানীরা এর সিকোয়েন্সিং করতে সক্ষম হয়েছেন। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সমস্ত ল্যাবে আমাদের ঠিকুজি কোষ্ঠী মজুত রয়েছে যা গবেষণায় মদত জোগাবে। এমনটা বোধহয় আগে কখনো হয় নি। আপনারা এতদিন জানতেন পশুপাখির থেকেই মানুষের শরীরে আমরা ঢুকি। কিন্তু আমরা যে একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের দেহে ঢোকার কায়দা ও রপ্ত করে নিয়েছি এই ব্যাপারটা আপনার খুব তাড়াতাড়ি বুঝে ফেলেছেন।

আপনারা আরো তিনটে দামী জিনিস বুঝে ফেলেছেন। একঃ ভাইরাস বাহিত যে কোন রোগের মোকাবিলা সব দেশ মিলে করা উচিত। দুইঃ লুকোছাপা করে আখেরে কোন লাভ হয় না। তিনঃ রোগের মোকাবিলা দ্রুত করতে হবে। ভাইরাসের সাথে লড়াইতে স্পিডই হচ্ছে আসল জিনিস।

কারণ, আমরা পাগলা হাতি। কোন আইন কানুন মানি না। আমাদের জীবনের একটাই লক্ষ্য - ছড়িয়ে পড়ো। নিজের লাখ লাখ কপি বানাও আর সেগুলোকে নতুন নতুন জীবদেহে ঢোকাও। বিজ্ঞানীরা যাকে বলেন হোস্ট। কোন একটা শরীরে আশ্রয় না পেলে তো আমাদের জীবন যাত্রা থেমে যাবে। খেল শেষ হয়ে যাবে। এবং নতুন শরীরে আশ্রয় পাওয়া মানেই আবার নতুন কপি অর্থাৎ আবার ও পরিবর্তন। বুঝতেই পারছেন যে কোন সময় আমরা আরো মারাত্মক ঘাতক হয়ে উঠতে পারি। শুধু সময়ের অপেক্ষা।

ভারতের ক্ষেত্রে আমাদের সুবিধে অসুবিধে দুইই আছে। সুবিধে হল, জনসংখ্যা খুব বেশি। জনঘনত্ব ও বেশি। ইতালিতে যেখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ২০৬ জন লোক বাস করেন, ভারতে সেই সংখ্যা ৪৬৪ – মানে লোক গাদাগাদি। পাবলিক যত বেশি ঘেঁষাঘেঁষি করবে আমাদের ততই সুবিধে। তাই তো আপনার দেশের সব রাজ্যের মধ্যে মুম্বইতে আমরা টপে আছি। তার ওপর আপনাদের দেশে স্বার্থপর লোকের সংখ্যা খুব একটা কম নয়। অনেকেই কোয়ারান্টাইন মানেন না। সেলিব্রিটিদের ক্ষেত্রে আপনার চট করে সেটা ধরে ফেলছেন ঠিকই কিন্তু আরো কত লোক যে ইনফেকশন ছড়াতে আমাদের গোপনে মদত যোগাচ্ছে সে হিসেব আপনাদের হাতে নেই। তাছাড়া কিছু লোকের বুদ্ধি খুব সূক্ষ – এত সূক্ষ যে আছে কিনা বোঝাই যায় না। তাই তাঁরা রাজনীতি করে অথবা অনাবশ্যক পয়েন্ট নিয়ে এদিক সেদিক নানা কথা বলে আমাদের সুবিধেই করে দিচ্ছেন। সেই মহান ব্যক্তিদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ আছি এবং আজীবন থাকব। চালিয়ে যান, প্লিজ।

FakeNews
অঙ্কন সৌজন্যঃ অপ্রতিম চৌধুরী

অসুবিধে হল, ভারত গরম দেশ, আর্দ্রতা ও বেশি। এতে আমদের কিছুটা কষ্ট হয়। রেলিং-এ, দরজার হাতলে, কারেন্সি নোটের ওপর কিংবা স্মার্টফোনের গায়ে বেশিক্ষণ টিঁকে থাকতে পারি না। সবচেয়ে বড় কথা হল, ভারতে যেভাবে প্রথম থেকেই পরিস্থিতির চটপট মোকাবিলা শুরু হয়েছে সেটা আমাদের সত্যি খুব মুশকিলে ফেলে দিয়েছে। চীন, ইতালি, ইরান, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও আমেরিকাতে একশো জন থেকে হাজার মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে যেখানে আমাদের সময় লেগেছে মাত্র পাঁচ ছয় কি সাত দিন - সেখানে ভারতে এক সপ্তাহের মধ্যে একশো থেকে পাঁচশোতে ও পৌঁছতে পারি নি। মহামারী ছড়ানোর চারটে ধাপের মধ্যে আমরা এখনো দু’নম্বরেই আটকে রয়েছি। তৃতীয় ধাপ অর্থাৎ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু করতে না পারলে ভারত জয়ের স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। তাই আমাদের কাজে সুবিধে করে দেবার জন্যে কিছু বিনীত আবেদন রাখছি। প্রথম কথা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে সেদিকে কান দেবেন না। ওদের ওয়েবসাইট ভুলে ও খুলতে যাবেন না। বরং ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে চোখ রাখুন। অনেক কিছু জানতে পারবেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কী বলছে সেসব না মানলে ও চলবে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কোন কথায় তো একদমই পাত্তা দেবেন না, প্লিজ। নইলে আমাদের খুব অসুবিধে হবে। উনি যখনই জনতা কার্ফুর ডাক দেবেন বা লকডাউনের কথা বলবেন তখন এতে গরীব দিনমজুরদের অসুবিধের কথা উত্থাপন করে এর প্রতিবাদ করবেন। জনতা কার্ফুর দিন বাইক বা গাড়ি নিয়ে বিনা কাজে অবশ্যই বেরোবেন। নইলে আপনার স্মার্টনেস কী করে বোঝা যাবে? একসাথে কাঁসর ঘণ্টা বাজানো বা হাততলি দেবার মত অবৈজ্ঞানিক প্রস্তাব অবশ্যই অগ্রাহ্য করবেন। আপনাদের একতা এবং সংহতি আমাদের জন্যে বিপদজনক। আমরা ডিভাইড এন্ড রুল-এ বিশ্বাস রাখি। তবে অতি উৎসাহে খোল করতাল নিয়ে সবাই পথে নামলে কিন্তু আমাদের পোয়াবারো। এমনিতে সরকারী নির্দেশ নিয়ে মন খুলে হাসাহাসি করুন, খিল্লি ওড়ান। ফেক নিউজ নিয়ে মেতে থাকুন। কোথা ও কিছু একটা খবর পেলে কিছু না ভেবে অমনি ফরোয়ার্ড করে দেবেন। সোশাল মিডিয়াতে প্রমাণ করুন আপনার চেয়ে বড় ওয়াকিফ-হাল বা জ্ঞানী অথবা রসিক আর কেউই নেই। পুলিশে ধরলে তখন না হয় বাক স্বাধীনতার দোহাই দেবেন। কিছু অভ্যাস - ডাক্তারবাবুরা যাকে বলেন গুড হেলথ হ্যাবিটস – সেগুলো একদম রপ্ত করবেন না। যেমন, হাত ধোয়া, নিজের নাকে মুখে হাত না দেওয়া ইত্যাদি। আরেকটা বেশ বড় ফ্যাক্টর আছে। পথেঘাটে, ট্রেনে, বাসে অনেককেই খুল্লমখুল্লা হাঁচতে দেখা যায়। এতে নাকমুখ থেকে নিঃসৃত তরল পদার্থের ছোট অদৃশ্য কণাগুলো বাতাসে ভাসতে থাকে আর শ্বাসের সাথে অন্যদের শরীরে ঢুকে পড়ে। যিনি হাঁচলেন তার শরীরের ব্যাকটেরিয়া বলুন ভাইরাস বলুন সেটা ও নতুন হোস্ট পেয়ে যায়। তাই হাঁচার সময় রুমাল, টিস্যু ইত্যাদি ব্যবহার করার কথা বলা হয়। শুধু করোনা ভাইরাসই কেন, যে কোন সংক্রমণ যেমন সাধারণ সর্দিকাশির ক্ষেত্রে ও এই সতর্কতা নেওয়া উচিত – এটাই ডাক্তারবাবুরা বলেন। এসব একদম শুনবেন না। আমাদের কাজটা সহজ হবে। শাহিনবাগ ইত্যাদি গণতান্ত্রিক আন্দোলন জারী রাখুন। মন্দির মসজিদ চার্চ গুরদোয়ারায় যথারীতি ভীড় করুন। কারণ আপনারা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখলে আমরা খুব মুশকিলে পড়ে যাব।

জেনে রাখুন আমরা অতটা মারতে পারি না ঠিকই, তবে একসাথে অনেক লোককে অসুস্থ করে দিয়ে যে কোন দেশের হেলথ কেয়ার ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে দিতে পারি। অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় আপনাদের দেশে তো প্রতি হাজারে হাসপাতালে বেডের সংখ্যা এমনিতেই অনেক কম। কিন্তু ভেবে দেখুন, ইতালির হাসপাতালে তো বেড অত কম নেই। তবু সেখানে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা শুনলে আপনারা হয়ত আঁতকে উঠবেন। ঠিক করা হয়েছে, খুব বেশি ভীড় হলে সবাইকে আইসিইউ-তে রাখা যাবে না। না না, ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভ নীতি নয়। ঘোর বৈষম্য। আপনারা যাকে বলেন ডিসক্রিমিনেশন। যাঁদের বয়স আশি বা তার ও বেশি তাঁরা সিট পাবেন না। তাছাড়া সাধারণভাবে যাঁদের স্বাস্থ্য ঠিক নয় তাঁরা ও জায়গা পাবেন না। এই রোগে কখনো কখনো আমরা ফুসফুসে এমন ঝামেলা লাগাই যে রোগীর জন্যে শ্বাস নেওয়াই দুষ্কর হয়ে ওঠে। এক কথায় ইতালিতে ঠিক হয়েছে যাঁদের বাঁচার সম্ভাবনা কম তাঁদের আইসিইউ র বাইরে মরার জন্যে ফেলে রাখা হবে। কে বাঁচবে আর কে মরবে তা ঠিক হবে বয়স দিয়ে এবং শারীরিক অবস্থা দিয়ে। আপনারাই তো বলেন, প্রেম এবং যুদ্ধে অনায্য বলে কিছু নেই। এই মুহূর্তে তো আমাদের সাথে বিশ্বজুড়ে আপনাদের লড়াই চলছে। যেভাবে এই নীল গ্রহকে আপনার দূষিত করে তুলছেন তাতে বেঁচে থাকার সমস্ত অধিকার আপনারা খুইয়েছেন। সে কথা এখন থাক। আপাততঃ ভারতের জনগণকে চ্যালেঞ্জ দিলাম। আমরা সম্পূর্ণভাবে অরাজনৈতিক এবং পাক্কা সেকুলার। আমরা অন্ধ ভক্ত এবং বিষাক্ত বামের মধ্যে কোন ভেদাভেদ করি না। হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খৃষ্টান কিছুই মানি না। চায়নাতে আমাদের ঝক্কি পোয়াতে হয়েছিল। কারণ সেখানকার সরকার খুব কড়া। ভরসা রাখছি, এ দেশের সরকারকে আপনারা কড়া হতে দেবেন না। আপনারা সাম্য ভালোবাসেন তো? এই লড়াইয়ে যেই জিতুক আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি দেশে একতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করে দেব। আপনাদের জন্যে শুভকামনা রইল। ইতি।

আপনাদের একান্ত বিশ্বস্ত নভেল করোনা ভাইরাস, ২০১৯ – ইন্ডিয়া চ্যাপটার।


(আরো পড়তে চান? আমার ফেসবুক পেজ লাইক করে রাখুন। নতুন লেখা বেরোলেই আপনার কাছে খবর চলে আসবে।)

– ত্রিদেব চৌধুরী

(This was published on 25.03.2020 in the editions of 'Dainik Jugasankha', a leading vernacular daily in Assam. You can also read the story here. Go to page 4.)

tridev
View Author Profile

Comments

  1. Very good writing, Choudhuryda. It covered all details, not known to common man in very interesting way.

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বড্ড কাঁটা, আস্তে গিলিস!

স ন্ধে থেকেই বৃষ্টি পড়ছিল। গিন্নী যুত করে বানিয়েছিলেন আমার অত্যন্ত প্রিয় পদ সরষে ইলিশ। খুব মজা করে খাচ্ছিলাম। গিন্নী বলছিলেন বটে রাতের বেলায় সরষে বেশি খেও না, পেট গরম হবে, বয়স তো কম হয় নি ইত্যাদি। সরষে ইলিশের সাথে এরকম ঘ্যানর ঘ্যানর করলে মানায় কখনো, বলুন! আমি সেদিকে কান না দিয়ে গপাগপ খেয়েই যাচ্ছিলাম। মাঝখানে গলায় একবার কাঁটা ও আটকে গেছিল। যাই হোক, খেয়েদেয়ে তারপর ঠিক এগারোটায় শুয়ে পড়েছি। মাঝরাতে হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল। ঘুমচোখে দরজা খুলে দেখি, একি! আমার তিনতলার ফ্ল্যাটের দরজায় দাঁড়িয়ে স্বয়ং কিশোর কুমার !!! পরনে একটা ঢিলে জোব্বা মত পোষাক। এরকম একটা অদ্ভুত সাজে আগে তাঁকে কখনো দেখি নি। কিশোর কুমার তো একটু ইয়ে - মানে মাথায় একটু ছিট তো আগে থেকেই ছিল। নিজের বাড়ীতে না কি সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন, ‘কিশোর কুমার হইতে সাবধান!’ সবই মুডের ব্যাপার। আজকের পোষাকটা ও সেই মুডেরই বহিঃপ্রকাশ হবে হয়তো। সাথে কে একজন লম্বা, দাড়ি অলা, বুড়ো মত লোক। কোথায় যেন দেখেছি লোকটাকে। লোকটা পরে আছে কোট প্যাণ্ট, আর হ্যাট। অনেকটা যেন কিশোর কুমার স্টাইল। যাই হোক, মাঝরাতে কিশোরদা কে দেখে আম

অচিন পাখী

ক্লা স নাইনে আমার এক স্যার বলেছিলেন, ‘চাইলে তুমি ফিউচারে যেতে পারবে।‘ মনটা আনন্দে নেচে উঠেছিল। টাইম মেশিনের গল্প আগেই পড়া ছিল। সেটা তাহলে এবার সত্যি হতে চলেছে? জানতে চেয়েছিলাম, কীভাবে? জবাবে স্যার যা শুরু করলেন, তাতে আমার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। বাপ রে বাপ। বেজায় কঠিন। আগে জানলে একটু ও উৎসাহ দেখাতাম না। আমার মনমরা ভাব দেখে স্যার বললেন, ‘অঙ্কে যাদের আতঙ্ক তাদের জন্য এসব বোঝা মুশকিল।‘ ‘ভালো ভালো জিনিষ তো জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তাই বলে অঙ্ক? আমি ওতে নেই।‘ জোরে বলার সাহস নেই। তাই মনে মনেই বললাম। পরে যদি ও বিজ্ঞান শেখার দায়ে অঙ্ক আমাকে শিখতে হয়েছিল। সেসব তো স্টুডেণ্ট লাইফের কথা। এখন ভাবি, আমার মত আরো অনেকেই নিশ্চয় আছেন যারা বিজ্ঞানের নতুন নতুন ব্যাপার জানতে আগ্রহী। কিন্তু ঘুরেফিরে সমস্যা ওই এক জায়গায়। ড্রাগনের মত ভয়ঙ্কর আগুনে অঙ্ক! সেই দুঃখের জায়গা থেকেই নিজেকে একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছি। বিনা অঙ্কে বিজ্ঞানের কথা বলব। যাতে ক্লাস নাইনের ছাত্র ও বুঝতে পারে। টাইম মেশিনে চড়ে যদি অতীত বা ভবিষ্যতে যেতে হয় তবে প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসবে তা হল অতীত, ভবিষ্যত, বর্তমান কা