Skip to main content

A Hindu ritual to connect with the ancestors on a special day - 'Mahalaya'

আজ মহালয়া। অমাবস্যা তিথি। পিতৃপক্ষের শেষ দিন। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে দেবীপক্ষ। পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে তিল জল অর্পণ করে তর্পণ করার আজ শেষ দিন। অপেক্ষায় রয়েছেন আমাদের অগ্রজ অগ্রজারা। দাদু, ঠাকুর্দা, দিদা, ঠাকুমা এরা সবাই হয়ত আজ পরলোকের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াবেন। দু' তিনটে কালো তিল আর কোশাকুশি থেকে ক'ফোঁটা জল - এই সামান্য নিবেদনটুকু গ্রহণ করার জন্যে। মনে হয়ত আশা, কেউ কি এল, তাদের স্মরণ করতে?
কলেজে যখন বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছি তখন মনে হত এইসব তর্পণ ফর্পণ এক হাস্যকর কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। বাপ ঠাকুর্দাদের আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই যে আমাদের ওই ক'টা কালো তিল আর নদীর নোংরা দূষিত জল পেয়ে তৃপ্ত হবেন। যত সব! মরার পর আবার কিছু থাকে নাকি?
আজ এই পরিণত বয়সে বুঝি, তাঁরা এই তুচ্ছ জলাঞ্জলিতে তৃপ্ত হলেন কি না সেটা আসল কথা নয়। তাঁদের তৃষ্ণা মিটল কিনা সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল, তাঁদের স্মরণ করে নিজেরা ধন্য হলাম কি না। আসল কথা হল আমাদের মনের তৃষ্ণা মিটল কি না। জীবনের নানা ঝড় ঝাপ্টা তাঁরা সামলেছেন। দেশভাগের যন্ত্রণা, বারে বারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নতুন করে থিতু হওয়া -এতসবের পর ও নিজের মনন ও বিশ্বাস অটুট রেখেছেন এবং সেই প্রজ্ঞা দিয়ে গেছেন পরবর্তী প্রজন্মকে। যতদিন ছিলেন, মায়া মমতায় যত্নে সারাক্ষণ ঘিরে রেখেছেন আমাদের। তাঁদের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে বর্তমান। আমাদের ডিএনএ তে তাদেরই তো পরিচিত স্পর্শ। আমরা কি তাদের এই অপরিশোধ্য ঋণের কথা মাথায় রেখেছি?
কেন আমরা নিজেদের অতীতকে ভুলে যাচ্ছি? আমার দাদুর বাবার নাম কী ছিল? জানি না। তর্পণ করি নি তো কখনো আগে। জানি শুধু দাদুকে। দেশভাগের পর এপারে এসে পোস্টমাস্টার হয়েছিলেন। দেশের জমিবাড়ী ছেড়ে মামাদের নতুন ঠিকানা তখন পোস্টাল কোয়ার্টার। থেকে থেকেই দাদুর কি মনে পড়ত না সেই বড় উঠোনটার কথা - যেখান থেকে কখনো রোদ সরে যেত না? আর আমার সেই কাকু? যাঁর বিয়ে হয় নি! কী যেন নাম ছিল সেই কাকুর? মনে নেই।
কেন আমরা তাদের ভুলে গেলাম? তাঁরা শুধু নিজের দেশের মাটিতে মরতে চেয়েছিলেন। তাদের বুকে ছিল অশান্তির চিরন্তন মরুভূমি। তারা বুঝতেও পারেননি স্বাধীনতার আসল মানে যে দেশ ভাগ।
সত্যিই আজ যদি তোমরা সবাই জল খেতে আসতে! বাবা, মা, দাদু, কাকু, মেজমামা - সবাই। জানি, তা হবার নয়। তাই তো কুশের আংটি পরে নদীতে হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে তোমাদের সবার কথা ভাবছি।
হে আমার পিতৃ ও মাতৃ কুলের সমস্ত প্রত্যক্ষ এবং বিস্মৃত ও পরোক্ষ পূর্ব পুরুষগণ - আপনারা এই চিন্তায় তৃপ্ত হোন যে আমরা আপনাদের অবদান ভুলিনি।
ওঁ নমঃ আব্রহ্মভুবনাল্লোকা, দেবর্ষিপিতৃমানবাঃ,
তৃপ্যন্তু পিতরঃ সর্ব্বে, মাতৃমাতামহাদয়ঃ।
অতীতকুলকোটীনাং, সপ্তদ্বীপনিবাসিনাং।
ময়া দত্তেন তোয়েন, তৃপ্যন্তু ভুবনত্রয়ং।।
[বাংলায়] – ব্রহ্মলোক অবধি যাবতীয় লোকে অবস্থিত জীবগণ, দেবগণ, ঋষিগণ, দিব্যপিতৃগণ, মনুষ্যগণ, পিতৃ-পিতামহাদি এবং মাতামহাদি আপনারা সকলে তৃপ্ত হউন। কেবল
আমার এক জন্মের নহে এবং শুধু আমারও নহে, আমার অতীতের বহুকোটিকুল, যারা বহু জন্মান্তরে গত হইয়াছেন, সেই সেই কুলের পিতৃ-পিতামহ আদি, ও সপ্তদ্বীপবাসী (জম্বু, কুশ, ক্রৌঞ্চ, প্লক্ষ, শাক, শাল্মলী ও পুষ্কর) সমুদয় মানবগণের পিতৃ-পিতামহ আদি এবং ত্রিভুবনের যাবতীয় কিছু আমার প্রদত্ত এই জলে তৃপ্ত হউক।
পূর্বপুরুষরাই কি আমাদের জীবনের সবটুকু? আরো অনেকে আছেন, যাঁরা আমাদের বায়োলজিক্যাল পূর্বপুরুষ নন, কিন্তু তাঁদের অবদান স্বীকার না করে থাকা যায় না। আমার অঙ্কের স্যার তেমনই একজন। "স্যার, আপনি আমাকে হাতে ধরে যে ক্যালকুলাস শিখিয়েছিলেন তা আমি এতদিন পরে আজো ভুলিনি। আপনার থেকে পাওয়া শিক্ষাই আমার ছেলেকে দিয়েছি। আপনি যখন বেঁচে ছিলেন তখন এই কথাটা আপনাকে বলা হয় নি। আজ বললাম। শুনতে পাচ্ছেন তো, স্যার?"
আর আমার বন্ধুর মা? "আপনাকে কি ভুলতে পারি? নিজের ছেলের মতই আপনি আমাকে স্নেহ করতেন। বন্ধুর সাথে ঝগড়া হলে সব সময় আমার পক্ষ নিতেন। আমি একটু রোগা পাতলা ছিলাম বলে আপনার মনে ভয় লেগেই থাকত বন্ধুর সাথে হাতাহাতিতে আমার না লেগে যায়। লাজুক ছিলাম তাই কখনো বলতে পারি নি, আপনাকে আমার 'মা' বলতে ইচ্ছে হত। আপনার হাতের মুগডালের খিচুড়ী অনেক দিন খাই নি মাসীমা!"
আরো একজন। শ্বাশুড়ী মায়ের অভাব শ্বশুরবাড়ীতে গেলে আজো অনুভব করি। আপনারা সবাই জেনে রাখুন, আমি আপনাদের আজো ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি।
পূর্বপুরুষ ছাড়াও অন্যান্য আত্মীয় পরিজন, বন্ধুবান্ধব, পরিচিত অপরিচিত সবার শান্তি কামনায় এই তর্পণ করলাম।
ওঁ নমঃ যে বান্ধবা অবান্ধবা বা, যে অন্য জন্মনি বান্ধবাঃ।
তে তৃপ্তিং অখিলাং যান্ত, যে চ অস্মৎ তোয়কাঙ্খিণঃ।
[বাংলায়] –যাঁহারা আমাদের বন্ধু ছিলেন, এবং যাঁহারা বন্ধু নহেন, যাঁহারা জন্ম জন্মান্তরে আমাদের বন্ধু ছিলেন, এবং যাঁহারা আমাদের নিকট হইতে জলের প্রত্যাশা রাখেন, তাঁহারা পূর্ণ তৃপ্তি লাভ করুন।
এই মন্ত্রগুলোই হয়ত মানুষ, জীব ও প্রকৃতি সবাইকে শ্রদ্ধা জানাতে ও আপন করে নিতে আমাদের শিক্ষা দান করছে। হিংসায় আক্রান্ত আজকের পৃথিবীতে সবাইকে আপন করে নেওয়ার এই মন্ত্র বারবার উচ্চারিত হোক - প্রতিটি পিতৃ পক্ষে, প্রতিবছর মহালয়ায়। ওম শান্তি।

Comments

  1. It was a lovely read! Made me nostalgic. The article beautifully reminds us of the loved ones and their loved ones and how we all are connected somehow..the connection definitely not limited by genes only. :)

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

আমি করোনা বলছি

(You may use Landscape mode for a better view, if you are reading this on your phone.) হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। আমি করোনা ভাইরাস বলছি। করোনা পরিবারের সপ্তম সদস্য। আপনারা আমাদের নাম রেখেছেন নভেল করোনা ভাইরাস (2019-nCoV) - অর্থাৎ নব্য করোনা ভাইরাস। খুব মিষ্টি নাম কিন্তু। ২০১৯ এর শেষের দিকে চীনের উহান প্রদেশে আমাদের জন্ম। ঘটনাটা খুলেই বলি। চীনেরা প্যাঙ্গোলিন মেরে মেরে শেষ করে দিচ্ছিল। প্যাঙ্গোলিনেরা তখন আমাদের রিকোয়েস্ট করল কিছু একটা করার জন্যে। আমাদের গুরুজনেরা বাদুড়ের শরীরে আগে থেকেই মজুত ছিলেন। সেখান থেকে টুক করে তাঁরা প্যাঙ্গোলিনের শরীরে ঢুকে পড়লেন। প্যাঙ্গোলিনের দেহে ঢোকার পর তাঁদের রূপ পরিবর্তন হয়ে আমাদের জন্ম হল। সেখান থেকে আমরা মানুষের দেহে ঢুকে পড়লাম। আক্রমণ শুরু হল। অবাক হচ্ছেন? আমরা মানে ভাইরাসেরা অনেক রকম কায়দা জানি। আপনারা অত কিছু ভাবতেই পারবেন না। আপনাদের চোখে আমরা বেশ রহস্যময়। আমরা জীব নাকি জড় - এ ব্যাপারে আপনাদের বিজ্ঞানীরা এখনো ঠিক যাকে বলে পুরোপুরি ‘সিওর’ হতে পারেন নি। কারণ, আমরা ঠিক সেল বা জীবকোষ নই। নিছক জেনেটিক মালমশলা (নিউক্লিক এসিড) - প্রোটি

অচিন পাখী

ক্লা স নাইনে আমার এক স্যার বলেছিলেন, ‘চাইলে তুমি ফিউচারে যেতে পারবে।‘ মনটা আনন্দে নেচে উঠেছিল। টাইম মেশিনের গল্প আগেই পড়া ছিল। সেটা তাহলে এবার সত্যি হতে চলেছে? জানতে চেয়েছিলাম, কীভাবে? জবাবে স্যার যা শুরু করলেন, তাতে আমার মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। বাপ রে বাপ। বেজায় কঠিন। আগে জানলে একটু ও উৎসাহ দেখাতাম না। আমার মনমরা ভাব দেখে স্যার বললেন, ‘অঙ্কে যাদের আতঙ্ক তাদের জন্য এসব বোঝা মুশকিল।‘ ‘ভালো ভালো জিনিষ তো জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তাই বলে অঙ্ক? আমি ওতে নেই।‘ জোরে বলার সাহস নেই। তাই মনে মনেই বললাম। পরে যদি ও বিজ্ঞান শেখার দায়ে অঙ্ক আমাকে শিখতে হয়েছিল। সেসব তো স্টুডেণ্ট লাইফের কথা। এখন ভাবি, আমার মত আরো অনেকেই নিশ্চয় আছেন যারা বিজ্ঞানের নতুন নতুন ব্যাপার জানতে আগ্রহী। কিন্তু ঘুরেফিরে সমস্যা ওই এক জায়গায়। ড্রাগনের মত ভয়ঙ্কর আগুনে অঙ্ক! সেই দুঃখের জায়গা থেকেই নিজেকে একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছি। বিনা অঙ্কে বিজ্ঞানের কথা বলব। যাতে ক্লাস নাইনের ছাত্র ও বুঝতে পারে। টাইম মেশিনে চড়ে যদি অতীত বা ভবিষ্যতে যেতে হয় তবে প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসবে তা হল অতীত, ভবিষ্যত, বর্তমান কা

বড্ড কাঁটা, আস্তে গিলিস!

স ন্ধে থেকেই বৃষ্টি পড়ছিল। গিন্নী যুত করে বানিয়েছিলেন আমার অত্যন্ত প্রিয় পদ সরষে ইলিশ। খুব মজা করে খাচ্ছিলাম। গিন্নী বলছিলেন বটে রাতের বেলায় সরষে বেশি খেও না, পেট গরম হবে, বয়স তো কম হয় নি ইত্যাদি। সরষে ইলিশের সাথে এরকম ঘ্যানর ঘ্যানর করলে মানায় কখনো, বলুন! আমি সেদিকে কান না দিয়ে গপাগপ খেয়েই যাচ্ছিলাম। মাঝখানে গলায় একবার কাঁটা ও আটকে গেছিল। যাই হোক, খেয়েদেয়ে তারপর ঠিক এগারোটায় শুয়ে পড়েছি। মাঝরাতে হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল। ঘুমচোখে দরজা খুলে দেখি, একি! আমার তিনতলার ফ্ল্যাটের দরজায় দাঁড়িয়ে স্বয়ং কিশোর কুমার !!! পরনে একটা ঢিলে জোব্বা মত পোষাক। এরকম একটা অদ্ভুত সাজে আগে তাঁকে কখনো দেখি নি। কিশোর কুমার তো একটু ইয়ে - মানে মাথায় একটু ছিট তো আগে থেকেই ছিল। নিজের বাড়ীতে না কি সাইনবোর্ড লাগিয়েছিলেন, ‘কিশোর কুমার হইতে সাবধান!’ সবই মুডের ব্যাপার। আজকের পোষাকটা ও সেই মুডেরই বহিঃপ্রকাশ হবে হয়তো। সাথে কে একজন লম্বা, দাড়ি অলা, বুড়ো মত লোক। কোথায় যেন দেখেছি লোকটাকে। লোকটা পরে আছে কোট প্যাণ্ট, আর হ্যাট। অনেকটা যেন কিশোর কুমার স্টাইল। যাই হোক, মাঝরাতে কিশোরদা কে দেখে আম